নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া যুবক নয়নের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুরো জেলায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিখোঁজ মাদক ব্যসায়ী নয়ন (৪৮)-এর মরাদেহ উদ্ধার হওয়ার পর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এক ভয়ঙ্কর পরকীয়ার আখ্যান, যা শেষ হয়েছে বীভৎস হত্যাকাণ্ডে।
পুলিশের জানায়, নয়নকে হত্যার পর তার স্ত্রী ও তার প্রেমিক মিলে দেহটি খণ্ড-বিখণ্ড করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়েছিল। এই লোমহর্ষক ঘটনায় পুলিশের হাতে নয়নের স্ত্রী সাবিনা ওরফে সাবরিনা (৩৮) সহ মোট সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন পিপিএম (বার) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই চাঞ্চল্যকর মামলার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন।
পরকীয়ার ও খুনের পরিকল্পনা:ফতুল্লা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত মো. নয়ন দুটি সংসার চালাতেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ওরফে সাবরিনা (৩৮)-কে নিয়ে তিনি পিলকুনি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। প্রায় তিন বছর আগে নয়ন একটি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেল হাজতে যায়। আর ঠিক এই সময়েই নয়নের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা, রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল (৪২)-এর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
পুলিশের জানায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর নয়ন জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন এবং কিছুদিন পর নতুন ভাড়া করা পশ্চিম দেলপাড়ার বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই তিনি স্ত্রী ও রাসেলের পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। এ নিয়ে স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে তার মনোমালিন্য শুরু হয়। এই টানাপোড়েনের জের ধরেই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক (৫ অক্টোবর) বেলা অনুমান সাড়ে ১২ টাযর দিকে নয়নের ফ্লাটে আসেন পরকীয়া প্রেমিক রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল। এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ফ্ল্যাটের ভেতরে তখন সাবিনার পূর্বের সংসারের দুই মেয়ে সুমাইয়া (২০) ও সানজিদা ওরফে সাজু (১৮) উপস্থিত ছিল।
হত্যা ও দেহ গুম:পুলিশ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, মনোমালিন্যের একপর্যায়ে সাবিনা ও রাসেল ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে নয়নকে আটকে ফেলে। এরপর লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং ধারালো ছোরা দিয়ে নিম্নাংশে কুপিয়ে নয়নের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপরের ঘটনা আরও ভয়াবহ:- পুলিশের দাবি, পরের দিন (৬ অক্টোবর) রাতে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা সহযোগী হিসেবে চয়ন (৩৮), জুয়েল (২৮), নোমান ওরফে মানিক (২৮), নয়নের দুই মেয়ে সুমাইয়া ও সানজিদা এবং পলাতক আসামী সামির (২০) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জন মিলে একজোট হয়। হত্যাকারীরা একটি হ্যাক-স-ব্লেড ব্যবহার করে নয়নের দুটি পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর মৃতদেহের উপরের অংশ (হাতসহ) নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে পলিথিন ও স্কচটেপ দিয়ে মুড়ে একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে ফতুল্লার উত্তর শিয়াচর এলাকার তক্কারমাঠের মাওয়া সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশে ফাঁকা জমিতে ফেলে রাখা হয়। বিচ্ছিন্ন পা দুটি এবং হত্যার সংশ্লিষ্ট আলামত একটি তোশকের ভিতর পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পিলকুনি সরকারী প্রাইমারী স্কুলের গলি সংলগ্ন আশরাফের ফাঁকা জমিতে ফেলে দেয়।
পুলিশের ৭ আসামি গ্রেপ্তার:- গত ৭ অক্টোবর বিকেলে ড্রামে ভরা নয়নের লাশ উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। পিবিআই ও সিআইডি নারায়ণগঞ্জের সহায়তায় ভিকটিমের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন-এর নির্দেশনায় দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) তারেক আল মেহেদী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার “ক” সার্কেল মো. হাছিনুজ্জামান-এর তত্ত্বাবধানে ফতুল্লা মডেল থানার একটি আভিযানিক টিম নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী সাবিনা ওরফে সাবরিনা, পরকীয়া প্রেমিক রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল, চয়ন, জুয়েল, নোমান ওরফে মানিক, সুমাইয়া এবং সানজিদা ওরফে সাজুসহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা প্রত্যেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক বিচ্ছিন্ন করা পা দুটিসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
নয়নের বাবা মো. আব্দুল সালামের অভিযোগের ভিত্তিতে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা (৩০২ ধারা), আলামত গুম (২০১ ধারা) সহ সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা (নং-১২, তারিখ-০৮/১০/২৫ইং) রুজু করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.
Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.
Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.